ব্যবসায় উদ্যোগ হলো নতুন ধারণা ও চিন্তা নিয়ে ব্যবসায় গড়ে তোলার উদ্যোগ বা কর্মপ্রচেষ্টা। এর মূলে থাকে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটা সফল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করা। যাতে উদ্যোক্তার আয়- রোজগারের পাশাপাশি তা তার ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়। এরূপ চেষ্টা-প্রচেষ্টার মধ্যে যে সকল কাজ সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন (Development of entrepreneurship thinking) : ব্যবসায় উদ্যোগ সৃজনশীল চিন্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্য ব্যবসায়ী কোন ব্যবসায়ে ভালো করছে, সে দিকটা দেখার চাইতে নিজে কোন ব্যবসায় গড়ে তুললে ভালো করতে পারবে একজন উদ্যোক্তা সে দিকটা দেখতেই আগ্রহী থাকে । নতুন কী করলে ব্যবসায়ে দ্রুত সাফল্য লাভ সম্ভব হবে- সে বিষয় তার কাছে প্রাধান্য পায়। এভাবেই সে নানান চিন্তাকে বিচার-বিবেচনা করে উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন ঘটায়।
২. সম্ভাব্যতা যাচাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Testing feasibility and taking decision) : উদ্যোগ চিন্তা কতটা কার্যকর হবে এটা দেখার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে নানান সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করতে হয় । চিন্তাকে একটা প্রকল্প বিবেচনা করে এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ, খরচ, আয় ও মুনাফা কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করা হয়। লাভজনকতা বিচারে নতুন প্রকল্প চিন্তা গ্রহণযোগ্য হলে তা বাস্তবায়নে উদ্যোক্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।
৩. অর্থসংস্থান (Financing) : যে কোনো নতুন ব্যবসায় উদ্যোগে অর্থসংস্থানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একজন উদ্যোক্তা তার নতুন চিন্তার বিষয়ে খুবই উৎসাহী ও আশাবাদী থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অর্থসংস্থানের সামর্থ্য সীমাবদ্ধ থাকে। এজন্য ব্যবসায় উদ্যোগে কখন কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, কোন কোন উৎস থেকে উক্ত অর্থ সংগ্রহ করা যাবে তা সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে অর্থ সংগ্রহ, বিনিয়োগ, নগদ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজ করতে হয়।
৪. ঝুঁকি গ্রহণ (Taking risk) : ব্যবসায় উদ্যোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ঝুঁকি গ্রহণ । ব্যবসায় উদ্যোগে যেহেতু নতুন পণ্য, সেবা, পদ্ধতি, বাজার ইত্যাদিকে সামনে নিয়ে আসা হয় ফলে তার কার্যকারিতা কতটা ফলদায়ক হবে এ নিয়ে স্বভাবতই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেশি থাকে। এজন্যই একজন উদ্যোক্তাকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হয় । এই ঝুঁকিকে পিছনে রেখে সাফল্য অর্জনে তাই একজন উদ্যোক্তা অনেক বেশি প্রত্যয়ী ও কর্মতৎপর থাকেন।
৫. উপকরণাদি সংহতকরণ (Organizing resources) : ব্যবসায় উদ্যোগকে সফল করতে অর্থ ছাড়াও বিভিন্ন উপকরণ: যেমন- শ্রম, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি জোগাড় এবং সেগুলো সঠিকভাবে সমন্বিত করার প্রয়োজন পড়ে । এক্ষেত্রে জনশক্তি সংগ্রহে উদ্যোক্তাকে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। এক্ষেত্রে একবার ভুল করলে উদ্যোগ এগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানে উত্তম নিয়ম-পদ্ধতি গড়ে তোলা না গেলে পরবর্তীতে প্রতি পদে পদে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।
৬. বাজার সৃষ্টি (Creating market) : বাজার সৃষ্টি বলতে মূলত নির্দিষ্ট এলাকায় চাহিদা সৃষ্টির কাজকে বুঝায়। নতুন পণ্য বা সেবা বাজারজাত করতে চাইলে উক্ত পণ্য বা সেবাকে ক্রেতা সাধারণের নিকট জনপ্রিয়। করে তুলতে হয় । নতুন ব্যবসায় শুরু করলে সম্ভাব্য গ্রাহকদের ঐ ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলার প্রয়োজন পড়ে। সম্ভাব্য গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার জন্য উত্তম পণ্য ও সেবার পাশাপাশি উত্তম আচরণ, গ্রাহকদের সুবিধামতো মূল্য ও শর্ত নির্ধারণ, প্রচার ও যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি নানান কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে । এভাবে একবার বাজার সৃষ্টি করা গেলে উদ্যোগ এগিয়ে নেয়া সহজতর হয় ।
৭. সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন (Evaluation of success & failure) : ব্যবসায় উদ্যোগে সাফল্য লাভ করতে হলে কাজ শুরুর পর প্রকল্পের প্রতিটা পর্যায়ে এর সাফল্য ও ব্যর্থতা মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে । সাফল্যে অভিভূত না হয়ে সাফল্যকে ধরে রেখে কিভাবে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়া যায় একজন উদ্যোক্তাকে তা নিয়ে ভাবতে হয় । কোন কোন দিক থেকে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে যদি ব্যর্থতা লক্ষ করা যায় তবে সমস্যা মূল্যায়ন করে তা সমাধানে দ্রুত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
৮. উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন (Execution of development program) : ব্যবসায় উদ্যোগে সফলতা ধরে রাখতে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে যথেষ্ট সতর্ক ও আন্তরিক হওয়ায় প্রয়োজন পড়ে । মনে রাখতে হয় “সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের হাজার ফোঁড়' অর্থাৎ নতুন পণ্য, সেবা, পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে এটাকে যতদ্রুত সম্ভব মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন । এক্ষেত্রে কোনোরূপ আলস্য প্রতিযোগী সৃষ্টির পথ খুলে দিতে পারে । তাই উন্নয়ন কর্মসূচিকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবার কোনো সুযোগ থাকে না ।